بسم الله الرحمن الرحيم
>
>তায়েফ ও ত্বাহা দুই
ভাইবোন।
>
>এক সাথে একই
স্কুলে যায়।
>
>ফিরেও এক
সাথে।
>
>তায়েফ পড়ে সপ্তম
শ্রেণিতে আর ত্বাহা
ষষ্ঠতে।
>
>একজনের প্রতি
আরেকজনের দরদ অগুনতি।
>
>খাবার কিংবা খেলনা
নিয়ে এখনোবধি দুজনের
ঝগড়া হয়নি।
>
>মা
সেলিনা বেগম অবাক হন
ওদের পারস্পরিক
ভালোবাসা দেখে।
>
>মনে মনে স্রষ্টার
দরবারে শত কোটি
শুকরিয়া জানান।
>
>তায়েফের বাবা আব্দুল
হামিদ মধ্যপ্রাচ্যে
থাকেন।
>
>ফলে
দু’ভাইবোনের আবদার
মার কাছেই।
>
>সারাদিনের ঘটে
যাওয়া বিচিত্র
ঘটনাগুলো দুজনে মায়ের
সাথে ভাগ করে।
>
>তায়েফ
বাইরে কোথাও কিছু
খেলে যথাসম্ভব চেষ্টা
করে বোনের জন্য নিয়ে
আসার।
>
>ভীষণ ভালো
বোন তার।
>
>ক্লাসে
ফাস্ট, বিভিন্ন
প্রতিযোগিতায় ফাস্ট।
>
>পিছিয়ে কেবল
নামাযের ব্যাপারে।
>
>নামায পড়তে সে
অনাগ্রহী।
>
>সেলিনা
বেগম অনেকবার চেষ্টা
করেছেন তাকে নামায
পড়াতে।
>
>কিন্তু সফল হননি।
>
>ধমক দিলে অভিমানী
মেয়েটা কান্না করে।
>
>দিনভর কাঁদতে কাঁদতে
শেষে না খেয়েই
ঘুমিয়ে যায়।
>
>তাই তিনি
বেশি কঠোর হতে
পারেন না।
>
>দায়িত্বের
ঘাটতি তবু তাঁকে নিরাশ
করেনা।
>
>খোদার কাছে
তিনি মনের আকুতি
জানান।
>
>এই বিষয়টা
নিয়ে ত্বাহার উপর খুব মন
ভার হয় তায়েফের।
>
>নানান গল্পের ছলে
নানা ভাবে বুঝিয়ে
সুঝিয়েও কাজ হয় নি।
>
>তায়েফের নামাযের
প্রথম অনুশীলন হয় তার
দাদার হাত ধরে।
>
>বয়স
যখন তার চার, তখন থেকেই
আযান হওয়া মাত্র
তায়েফকে নিয়ে
মসজিদের পথে ছুটতেন
তিনি।
>
>বেশির ভাগ সময়ই
বাড়ির পুকুরে ওযু করে
যেতেন।
>
>তায়েফ তাঁর
দেখাদেখি হাত মুখ
ভেজাতো, মাথা
মাসেহ করতো।
>
>তারপর
বাবার পাঠানো ছোট
জায়নামাজ দাদুর
জায়নামাজের পাশে
বিছিয়ে নামায পড়া শুরু
করতো।
>
>দাদু রুকু করলে রুকু
করতো, সিজদাহ করলে
সিজদাহ করতো।
>
>মসজিদের ইমাম এতটুকু
বাচ্চার নামায দেখে
আনন্দিত হতেন।
>
>কোলে
নিয়ে আদর করতেন।
>
>বাহবা দিতেন দাদু ও
নাতিকে।
>
>বাড়িতে
কোনো কোনো সময়
হালকা বিশ্রাম
নেওয়ার কালে আযান
হলেই তায়েফ ভোঁদৌড়
দিত দাদার ঘরে।
>
>খাটের কোণা থেকে
দুজনের জায়নামাজ
কাঁধে নিয়ে দাদাকে
ডাকতো।
>
>দাদাভাই!
আযান দিছে গো।
>
>নামাযো
যাইত্তাম।
>
>দাদা
নাতির ডাকে চোখ খুলে
প্রশান্তির হাসি
হাসতেন।
>
>জড়িয়ে ধরে
আদর করতে করতে মসজিদে
রওনা হতেন।
>
>নয় বছর বয়সে ভেঙে যায়
সেই জুটি।
>
>এক
কুয়াশাভেজা শীতের
রাতে তারা দাদা
ইহলোক ত্যাগ করেন।
>
>জীবনের প্রথম হোঁচট
খায় তায়েফ।
>
>মসজিদে
যাবার বেলা ভীষণ
কাঁদতো দাদার কোমল
হাতটির ছোঁয়া না
পেয়ে।
>
>কিন্তু নামায
ছাড়ে নি।
>
>বরং
নামাযের সময় এলেই মনে
পড়তো দাদার কথাগুলো
-দাদুভাই! নামায অইলো
বেস্তর (বেহেশত) চাবি।
>
>মরার পরে যে
নামাযোর ফাক্কা
হিসাব মিলাইয়া
দিলাইতো ফারবো,
আল্লাহ তা’লায় তার
আতো বেস্তর চাবি
দিলাইবা।
>
>নামাযো
উবাইলে অউ মনো খরবায়
আল্লায় (আল্লাহ)
তোমারে দেখরা,
তোমার হখল কথা হুনরা।
>
>তোমার লগে মাতরা।
>
>তায়েফ তখন সব কথার
মানে না বুঝলেও এখন
বোঝে।
>
>বোঝে
নামাযের মাধ্যমে
খোদার কাছে চাওয়া
পরীক্ষায় ভালো নম্বর
পাবার কথা, স্মরণশক্তি
বৃদ্ধির কথা, বাবা
মায়ের নেক হায়াত দান
ও সুস্বাস্থ্যের কথা
কীভাবে বাস্তবায়ন
করেন।
>
> ভুলে না সে প্রতি
মোনাজাতে দাদার
জন্য জান্নাতুল ফিরদাউস
চাইতে।
>
>ত্বাহা
নামাযের নেয়ামত
থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
ভাবলেই কষ্ট পায় সে।
>
>এখন সন্ধ্যা সাতটা।
তায়েফদের প্রাত্যহিক
রুটিনে হাল্কা নাস্তার
সময়।
>
>রান্নাঘরের
একপাশে রাখা খাবার
টেবিলে মায়ের
হাতের তৈরি পানি
পিঠা খেতে খেতে
ত্বাহা বারবার
তায়েফের দিকে
তাকাচ্ছে।
>
>তায়েফ আজ খুব
নীরব।
>
>সে জিজ্ঞেস করে-কী
হয়েছে ভাইয়া।
>
>এতো
চুপচাপ? তায়েফ জবাব
দেয় কিছু হয়নি।
>
>ত্বাহা
আবার বলে, স্বুল থেকে
ফেরার সময়ও দেখলাম
নীরব এখনও তাই।
>
>কী
হয়েছে বল? তায়েফ
এবারও বলে কিছু হয়নি।
>
>সেলিনা বেগম আরও দুটো
পিঠা তায়েফের
বাটিতে দিতে দিতে
বললেন, তুমি না মিথ্য
কথা বলো না বাপ? কী
হয়েছে বলো।
>
>তায়েফ
এবার একেবারে চুপ।
>
>সেলিনা বেগম হাত
থেকে টেবিলে পিঠার
হাড়ি রেখে তায়েফের
মাথায় কাঁধে হাত
বুলিয়ে আবার জিজ্ঞেস
করলেন, স্কুলে কোনো
সমস্যা হয়েছে? তায়েফ
এবার কান্নাভেজা
গলায় জবাব দিলো-হ্যাঁ
মা।
>
>স্যার বকেছেন।
>
>একথা শুনে সেলিনা
বেগম ও ত্বাহা দুজনেই
অবাক।
>
>ত্বাহা ভাবছে
ভাইয়া তো বকা
খাওয়ার মতো কিছু করে
না।
>
>কী এমন করল যে বকা
খেয়ে কান্না করছে।
>
>সেলিনা বেগম শুকনো
মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
কেন বাপ? স্যার বকলেন
কেন? বাম হাত দিয়ে
চোখের জল মুছতে মুছতে
তায়েফ বলে, ধর্ম শিক্ষা
ক্লাসে আজ স্যার
বলছিলেন কে কে আজ
ফজরের নামায পড়েছ হাত
তুলো।
>
>আমরা যারা
নামায পড়েছি তারা
হাত তুললাম।
>
>এরপর স্যার
একজন একজন করে সবার
পরিবারের অন্যান্যদের
নামাযের ব্যাপারে
জানতে চান।
>
>ত্বাহার
ব্যাপারটা জানতে
চাইলে লজ্জায় আমি
মাথা তুলতে পারিনি।
>
>বিশ্বাস করো মা, স্যার
যখন বলছিলেন তোমার
মা তোমার বোনকে
নামায পড়তে বলেন না,
তুমি বলো না, তখন লজ্জা
আর দুঃখে শরীর কাঁপছিল
আমার।
>
>সবার সামনে আজ
ছোট হয়েছি মা আমি।
>
>তায়েফের কথা শুনে
ত্বাহা মাথা নিচু করে
রইল।
>
>লজ্জায় তারও
মাটিতে মিশে যেতে
ইচ্ছে করছে। তার জন্যই
কিনা আজ তার প্রিয়
ভাইটি অপমানিত হয়ে
কাঁদছে। ছোট হয়েছে
তার সব থেকে প্রিয়
স্যারের কাছে।
সেলিনা বেগম ছেলের
চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
কেঁদো না বাবা।
দেখো তোমার বোন
নামায ধরবেই। তোমার
এ লজ্জা ঘুচবেই
ইনশাআল্লাহ। তারপর
টেবিলের উপর রাখা
থালা বাটি নিয়ে
ছুটলেন রান্নাঘরে।
ততোক্ষণে ত্বাহাও তার
রুমে চলে গেছে।
প্রতিদিনের মতো আজও
তায়েফ ফজরের নামায
শেষে ‘আল্লাহ আমার রব’
হামদটি গেয়ে গেয়ে
ঘরে ফিরছিল। মায়ের
ঘরে পর্দার ফাঁক দিয়ে
আলো দেখে থমকে
দাঁড়ালো। সেলিনা
বেগম ফজরের নামায
শেষে নামাযের কক্ষেই
নিয়মিত কোরআন
তেলাওয়াত করেন। আজও
করছেন। পাঁচকক্ষ বিশিষ্ট
ঘরের উত্তর পাশে
সিটিং রুম। তারপরেই
তায়েফের বেডরুম।
দক্ষিণ পাশে নামাযের
ঘর। দুহাত পরিমাণ
প্যাসেজের পরেই
রান্নাঘর। রান্নাঘরের
পাশের রুমে মেয়েকে
নিয়ে থাকেন সেলিনা
বেগম। ঘরের দক্ষিণ পাশ
দিয়ে ফেরার পথে
মায়ের তেলাওয়াত শুনে
আসছে তায়েফ। তাই আলো
দেখে আস্তে আস্তে পা
ফেললো সেদিকে।
দরজার পর্দা সরিয়ে
রীতিমতো হতবাক হয়ে
গেলো। জায়নামাজে
দাঁড়িয়ে আছে ত্বাহা।
তায়েফ দু’হাত দিয়ে
চোখ কচলে ভালো করে
তাকালো। না, ভুল
দেখছে না সে। এ যে
ত্বাহা। মনে মনে
খোদার দরবারে
শুকরিয়া জানিয়ে রুমে
ঢুকলো সে। ত্বাহা
নামায শেষ করে মুচকি
হেসে বললো-কী রে
ভাইয়া? তুই এখানে?
তায়েফ আরেকটু এগিয়ে
ত্বাহার দুহাত ঝাপটে
ধরে বলে, আমার রুমে
যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা
সুঘ্রাণ এসে ছুঁয়ে দিলো
আমায়। কোত্থেকে সেই
ঘ্রাণ বেরুচ্ছে সেটা
খুঁজতে খুঁজতে এখানে
আসলাম। এবার বুঝতে
পারছি এটা কীসের
ঘ্রাণ। ত্বাহা জিজ্ঞেস
করে কীসের ঘ্রাণ।
তায়েফ জবাব দেয়-
নামাযের ঘ্রাণ! তারপর
নাক উঁচু করে ঘ্রাণ শুঁকার
ভান করে। ত্বাহার হাত
ধরে টেনে নিয়ে চলে
মায়ের কাছে।
আবেগাপ্লোত কণ্ঠে ডাক
দেয় সেলিনা বেগমকে।
মা! ও মা! তুমি কী
পাচ্ছো সেই ঘ্রাণ?
ত্বাহার নামাযের
ঘ্রাণ? দেখো না পুরো
ঘরে সেই ঘ্রাণ কীভাবে
ছড়াচ্ছে। সেলিনা
বেগম তখন তাকের উপর
কোরআন শরীফ রেখে তার
কক্ষে ফিরছিলেন।
দুজনকে দুহাতে কাছে
টেনে বললেন, হ্যাঁ
বাবা। নামাযের
সুঘ্রাণ এমনই। বিমোহিত
করে অন্তর। আমি বলছিলাম
না আমার মেয়ে নামায
ধরবেই। তায়েফ ত্বাহার
দিকে চেয়ে অস্থির কণ্ঠ
বলে, ও ত্বাহা! বল না
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত
নামাযই তুই আদায় করবি।
ত্বাহা লাজুক কণ্ঠে জবাব
দেয়, ইনশাআল্লাহ করবো
ভাইয়া। মা বলেছেন
কাল তুই যেভাবে সবার
সামনে লজ্জা পেয়েছিস
ঠিকমতো নামায আদায়
না করলে হাশরের মাঠে
এর চেয়ে হাজারগুণ লজ্জা
ও শাস্তি পেতে হবে।
আমি সেই লজ্জা ভয়
কোনোটাই চাইনা
ভাইয়া, তোকেও আর
লজ্জা পেয়ে কাঁদতে হবে
না। কালকের ঘটনার জন্য
আমি সরি ভাইয়া।
কীসের সরি?
কালকেরটা কাল গেছে।
আরও কী যেন বলতে
চাইছিলো ঠিক সে
মুহূর্তে সেলিনা
বেগমের ফোন বেজে
উঠতেই সেদিকে দৌঁড়
দেয় তায়েফ। উচ্চস্বরে
বলে বাবাকে খবরটা
দিতে হবে মা। ত্বাহাও
ছোটে তার পেছনে।
দাঁড়িয়ে আছেন কেবল
সেলিনা বেগম। অশ্রুতে
টলটল করছে তার চোখ। এ
অশ্রু দুঃখের নয়। অনেক
চাওয়ার পর রবের কাছ
থেকে পরম প্রাপ্তির
কৃতজ্ঞতা স্বীকারের
নিদর্শন।