بسم الله الرحمن الرحيم
আমার বিয়ের
কথাবার্তা প্রায়
চুড়ান্ত হয়ে যাবার
পর দেনমোহরের অংক
নিয়ে ঝামেলা
হওয়াতে ভেঙ্গে
গিয়েছিল।
বান্ধবীদের কারো
কারো ক্ষেত্রে
এরকম হতে শুনেছি
কিন্তু কল্পনায়ও
ভাবিনি আমার
ক্ষেত্রে একই ঘটনা
ঘটতে পারে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে
প্রথমবার দেখা হবার
পর হতে শাহেদের
সাথে আমার
মোবাইলে নিয়মিত
কথা হত। দুই
পরিবারের কেউ
বাধা দেয়নি। কিন্তু
সম্পর্কটা ভাঙ্গার
আগে কেউ আমার
মতামত জানার
প্রয়োজনও বোধ
করেনি৷
মোবাইলের এড্রেস
বুক খুলে শাহেদ
নামটার দিকে
তাকিয়ে আছি।
আঙুলের একটা চাপ
দিলেই শাহেদ
নামটা এড্রেস বুক
হতে মুছে যাবে।
আসলেই কি যাবে?
প্রেমে পড়ার জন্য
যথেষ্ট সময় হয়ত নয়
কিন্তু ভাল লাগার
জন্য এটুকুই যথেষ্ট
ছিল। বিয়ের পর
কোথায় বেড়াতে
যাব সেই পরিকল্পনাও
হয়ে গিয়েছিল।
ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি
দেনমোহর নিয়ে
ঝামেলা বাধবে।
আব্বু আম্মুকে কিছু
বলতেও পারছি না।
আমার বড় বোনের
বিয়ে হয়েছিল ১৫
লাখ টাকা
দেনমোহরে। আব্বু
আমার জন্য ২০ লাখ
টাকা প্রস্তাব
করেছিলেন।
শাহেদের বাবা মা
নাকি ৬ লাখ
বলেছেন। এত কম অংক
শুনে আমার মামা
খালা, ফুপুরা সবাই
ভেটো দিয়েছেন। এই
বিয়ে হবে না ব্যস।
বড় আপু এসে
সিদ্ধান্তটা
জানিয়ে দিয়ে গেল,
আমাকে জিজ্ঞেসও
করল না। এই সমাজে
মেয়েদের মতামতের
কোন মূল্য নেই।
মোবাইলটা বাজছে।
একটা অপরিচিত
নাম্বার। সাধারণত
ধরিনা, আজ কি মনে
করে ধরলাম। একজন
ভদ্রমহিলার গলা
ভেসে এলো,
– হ্যালো কে দিনা?
– জি, আপনি…
– আমি শাহেদের মা,
তোমার সাথে একটু
কথা বলতে
চাইছিলাম।
– জি বলেন, শুনছি…৷
– শাহেদ তো সহজে
কাউকে পছন্দ করে
না। তিন চারটা
প্রস্তাব মানা করার
পর তোমাকে পছন্দ
করেছে। আসলে
আমারও তোমাকে খুব
ভাল লেগেছে মা।
সমস্যা হয়েছে
দেনমোহর নিয়ে,
তুমি কিছু শুনেছ?
– জি আন্টি। আপুর
দেনমোহর ১৫ লাখ
তো, আব্বুরা বলছে
অন্তত ২০ লাখ হতে
হবে। এটা মুরুব্বিদের
ব্যাপার, আমি আর
কিছু জানি না।
– আচ্ছা, শুনো। তবুও
তোমাকে একটু
বুঝিয়ে বলি যেহেতু
তোমার জীবনের
ব্যাপার আর এই
আর্থিক
নিরাপত্তাটাও
তোমার। এই যে
ইদানিং সবার খুব উঁচু
অংকে দেনমোহর
ফিক্স হয়, এই
টাকাগুলো কি আদায়
হয়? বিয়ের আগে কি
টাকাটা দেয়?
অনেকে এমনকি
বিয়ের পরেও দেয়
না৷ অনেকে
ডিভোর্স মামলা
করেও এই উঁচু
দেনমোহর আদায়
করতে পারেনি, ঠিক
না?
– আমার ঠিক জানা
নেই আন্টি, তবে
শুনিনি পেতে।
………… দেনমোহর – Love
Story Bangla ………….
– শাহেদের বেতন হল
৬০ হাজার মত। ২০
লাখ টাকা হল ওর ৩
বছরের বেতন। এত
টাকা ও চুরি না
করলে কোথা থেকে
পাবে? বয়স তো মাত্র
ত্রিশ, চাকুরিতে
ঢুকেছে বছর তিনেক
হল। নিজের টাকায়
বিয়ে করতে চায়
তাই এতদিন টাকা
জমিয়েছে। শুরুতে
বেতনও কম ছিল।
ও দেনমোহর পরিশোধ
করবে বলে ৬ লাখ
টাকা আলাদা করে
রেখেছে, বাসর
রাতে বউকে চেক
দিয়ে দিবে।
আমাদের কোন দাবী
দাওয়া নেই মা।
শাহেদ নিজের
বেডরুম ফার্নিচারও
কিনে ফেলেছে, ও
শ্বশুরবাড়ি হতে কিছু
নিবে না।
বরযাত্রীও বেশী
আসবে না, তাই
তোমার আব্বুরও
বেশী কষ্ট হবে না।
তুমি নিশ্চয়ই চাও না,
বিয়ে করে শাহেদ
বিশাল একটা চাপ বা
ঋণের মধ্যে পড়ে
যাক? আর শাহেদের
সম্ভবত প্ল্যান আছে
আগামীবছর
তোমাকে নিয়ে হজ
করার। দেনমোহর
হতে তোমার খরচ
তুমি বহন করবে,
অর্থাৎ নিজের
টাকায় হজ করে
আসবে। বাকিটুকু
তোমার সেভিংস।
হ্যালো দিনা, শুনছ?
তোমাকে আমাদের
খুব ভাল লেগেছে
তাই এতকিছু শেয়ার
করলাম। তোমার
মামা ফোন করে
মানা করে দেয়ার
পরও কথাগুলো বললাম।
ভাল থেক। নিজের
যত্ন নিও।
মন্ত্রমুগ্ধের মত
ভদ্রমহিলার কথা
শুনছিলাম। কি সুন্দর
প্ল্যান।
আধঘন্টা প্রায় অবশ
হয়ে বসে রইলাম। মন
স্থির করতে দশ
মিনিট সময় লাগল।
ড্রইং রুমে আব্বু, আম্মু,
মামা, মামী, আপুসহ
দশ বারোজন আড্ডা
দিচ্ছেন। সবার
সামনে গিয়ে
দাঁড়ালাম। আমার
একটুও গলা কাঁপল না।
– আব্বু, আমি
শাহেদকে বিয়ে
করব।
৬ লাখ দেনমোহরে
আমার আপত্তি নেই।
তোমরা ব্যবস্থা কর।
সবাই হা করে
তাকিয়ে আছে।
আমাকে কেউ কখনো
এভাবে কথা বলতে
দেখেনি। কেউ
ভাবেনি, দিনা
নিজের বিয়ের কথা
নিজেই বলতে পারে।
আমি আর কাউকে
কিছু বলার সুযোগ না
দিয়ে রুমে চলে
এলাম। অল্প করে
আম্মুর গলা শুনলাম,
বলছে নির্লজ্জ মেয়ে!
এর ঠিক তিন সপ্তাহ
পর শাহেদের সাথে
আমার বিয়েটা হয়ে
গেল। পরে শুনেছি,
অন্যদের বাধার মুখে
আব্বু আমার পক্ষ
নিয়েছিলেন।
বলেছেন, আমার এই
মেয়েটা কখনো কিছু
চায় না। ওর এই
ইচ্ছাটা আমি চাই না
অপূর্ণ থাকুক। পরে
অন্য সম্পর্কে কষ্ট
পেলে সারাজীবন
দোষারোপ করতে
পারে। তাছাড়া
ছেলেপক্ষের কোন
দাবীদাওয়া নেই,
শাহেদকেও যথেষ্ট
ভাল লেগেছে সবার৷
শুধু দেনমোহরের জন্য
ভেঙ্গে দেয়া ঠিক
হবে না, যখন ওরা
পুরো দেনমোহর
অগ্রিম পরিশোধ
করবে বলছে।
এরমধ্যে আমার হবু
শাশুড়ি বেশ কবার কল
দিয়েছেন, খোঁজখবর
নিয়েছেন। আমি
আন্টি ডেকে অভ্যস্ত
হয়ে গেলাম।
………… দেনমোহর – Love
Story Bangla ………….
বিয়ের দিন আমাকে
শাহেদের হাতে তুলে
দেয়ার সময় হঠাৎ
কোথা থেকে প্রচন্ড
আবেগ ভর করেছিল।
অশ্রুতে মুখের মেকাপ
লেপ্টে গিয়েছিল।
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে
ছাড়তে চাইনি একদম।
আমি আম্মুর আদরের
ছোট মেয়ে, কখনো
আম্মুকে ছাড়া
থাকিনি। এখন হতে
কিভাবে থাকব তাও
জানি না। শুধু
মেয়েদের
শ্বশুরবাড়িতে যেতে
হবে, কে যে এই অদ্ভুত
নিয়ম করেছে।
উল্টোটাও তো হতে
পারত। সিদ্ধান্ত
নিয়ে নিলাম যে
প্রতিদিনই একবার
করে বাসায় চলে
আসব।
বিয়ের পরদিন, আমার
শাশুড়ি ডেকে
বললেন,
– দেখ দিনা, আমি
চাই না আমাদের
সম্পর্ক গতানুগতিক বউ
শাশুড়ি টাইপ হোক।
এই বাসায় মানুষ
মাত্র ৪ জন। তোমার
শ্বশুর, আমি, তোমার
ননদ মিলি আর
শাহেদ। আমি
তোমাকে বাকি
তিনজনের
দুর্বলতাগুলো
শিখিয়ে দিব। ওগুলো
একটু যত্ন নিয়ে ফলো
করলে কয়েক মাসে
দেখবে তুমি সবার খুব
প্রিয় হয়ে গিয়েছ,
পারবে না?
– জি আন্টি।
উনি অদ্ভুত চোখে
কিছুক্ষণ আমার দিকে
তাকিয়ে রইলেন।
তারপর হাসলেন,
– আন্টি ডাকতে পার,
সমস্যা নেই। আম্মা
ডাক মন হতে না এলে
অপরিচিত কাউকে
জোর করে ডাকার
দরকার নেই।
শুরুর কয়েকদিন,
মেহমান আত্মীয়স্বজন
আর বন্ধুবান্ধবদের
ভিড়ে কিভাবে
কেটে গেল বুঝতেই
পারলাম না। আর
প্রতি সপ্তাহজুড়ে
অন্তত তিনটা
দাওয়াত। বাবার
বাড়ির দূরত্ব মাত্র
আধঘন্টার, প্রতি
সপ্তাহেই অন্তত দুবার
মায়ের কোলে গিয়ে
শুয়ে থাকতাম।
ফেসবুকে শাশুড়িদের
নিয়ে ভয়াবহ সব গল্প
আর অভিজ্ঞতা
পড়েছি। কয়েকটা
পড়ে তো আতংকে
আমার হাত-পা
কাঁপত। না জানি
কপালে কি দুর্দশা
লেখা আছে। আমার
শাশুড়ির কয়েকটা
দিক আমার খুব ভাল
লেগেছে।
গল্পেগুলোর সাথে
উনার কোন মিল নেই।
উনি আমাদের রুমে
কখনো নক না করে
আসেন না। আর ছুটির
দিনে দুপুরে যখন
শাহেদকে জড়িয়ে
ধরে একটু ঘুমাই, উনি
কখনো নক করেন না।
বিকেলে আমরা
বাইরে আসা পর্যন্ত
অপেক্ষা করেন।
আমাকে কিছু বুদ্ধি
শিখিয়ে দিয়েছেন।
শ্বশুর কিরকম চা-
বিস্কিট পছন্দ করেন,
সকাল দশটার পর
পত্রিকা পড়ার সময়
মনোযোগ দিয়ে
উনার রাজনৈতিক
এনালিসিস শুনে
কিভাবে মাথা
নাড়তে হবে বাধ্য
ছাত্রীর মত, মাথায়
কাপড় দিয়ে সামনে
গেলে আদর বেশী
পাব, মিলির জামা
কাপড় স্ত্রি করে
পরার অভ্যাস, ছুটির
দিন সকালে মশলা
দিয়ে চা খেতে
ভালবাসে, পাশের
মার্কেটে ফুড
কোর্টে গিয়ে দই
ফুচকা খাওয়া প্রিয়
আউটিং আর প্রিয়
শপিং হল পার্স
কেনা৷
মিলির সংগ্রহে
অন্তত ৪৭ টা পার্স
আছে বিভিন্ন রঙ আর
ডিজাইনের। আর
শাহেদ নিজে
অগোছালো হলেও
চারপাশে সবকিছু
গোছালো দেখতে
ভালবাসে। এই
কাজটা এতদিন আমার
শাশুড়ি করে
এসেছেন। সপ্তাহে
দুইদিন বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দেয়া
অভ্যাস। এই আড্ডা
নিয়ে বিরক্ত করা
কিংবা মানা করা
যাবে না৷ নিজ হতে
ছেড়ে দিলে ভিন্ন
কথা।
শুধু মাথা নেড়ে
বললেন,
– শাহেদের
সিগারেট খাওয়া
আমি ছাড়াতে
পারিনি। তুমি দেখ
পার কিনা। তবে
শুরুতেই এটা নিয়ে
ঝামেলা বাধিও
না। সময় নিয়ে সম্পর্ক
আরো মজবুত হলে
তারপর।
বললাম,
– আন্টি অন্যদেরগুলো
তো শুনলাম। আপনার
দুর্বলতা কি?
আন্টি হেসে উড়িয়ে
দিলেন,
– পারলে তুমি খুঁজে
বের কর। দেখি কেমন
মেয়ে তুমি।
রান্নাঘরের
আশপাশে ঘুরাঘুরি
করতে দেখে একদিন
বললেন,
– দেখ মা, আমি
জানি তোমার
পছন্দের কিছু রান্না
করতে ইচ্ছা করে।
আমি কিন্তু
তোমাদের বাসার
রান্না খেয়েছি।
হলুদ, মরিচ বেশী দেয়,
একটু ঝাল।
আমাদের বাসার
স্টাইল কিন্তু
আলাদা। শাহেদ আর
ওর বাবা খেতে
পারবেন না। তুমি
আপাতত চা নাস্তা
বানাও, কয়েক মাসে
বাসার রান্নার
স্বাদ বুঝে গেলে তখন
করতে পারবে।
শাহেদ অফিসে
গেলে সময় কাটে না।
ছাদ হতে আসা
বাসার কাপড়্গুলো
ভাঁজ করে রাখতে
দেখে আন্টি বললেন,
– এগুলা করার জন্য
মানুষ আছে। তোমার
হাতে এখন সময় আছে।
মাস্টার্স এ ভর্তি
হয়ে যাও, একবার মা
হয়ে গেলে আর
মেয়েদের নিজের
জন্য সময় থাকে না,
তখন শুধুই অন্যদের জন্য
বাঁচতে ইচ্ছা করে।
পড়ালেখাটা
একটানে শেষ করে
ফেল। এই ভুলটা আমি
করেছিলাম,
মাস্টার্স আর করা
হয়নি।
পড়া শেষ করে
কিছুদিন জব
এক্সপেরিয়েন্সও
নিতে পার।
মেয়েদের পায়ের
নিচে মাটি শক্ত
হওয়া জরুরী। এই যে
দেখ আমি
পরনির্ভরশীল,
উপার্জনের কোন
ক্ষমতা নেই। তবে
আমি যতদিন শক্ত
আছি ঘরের দায়িত্ব
নিয়ে তোমাকে
ভাবতে হবে না।
নাতি নাতনিও বড়
করতে পারব, তোমার
মায়ের হেল্প লাগবে
না।
ও মা, নাতি নাতনির
কথা শুনে মেয়ের গাল
দেখি লাল নীল
বেগুনি হয়ে যাচ্ছে
হিহিহি। আরে
এক্ষুনি নিতে হবে
বলিনি তো…।
লজ্জা পেয়ে
পালিয়ে বাঁচলাম।
আন্টি কিন্তু মুখে
বলেই ভুলে যাননি,
সত্যিই মাস্টার্স
ভর্তির ফর্ম আনিয়ে
শাহেদকে দিয়ে
জমাও করিয়ে
দিলেন। নাহ, এই
মহিলা ছাড়ার পাত্র
না একেবারেই।
বছরখানেক বিয়ের
আনন্দে কাটাবো
ভেবেছিলাম।
বেড়াবো, ঘুরব, হইচই
করব। বিয়ের মাত্র
পাঁচ মাস পেরিয়েছে
আর নতুন সেমিস্টারে
ক্লাস শুরু হবে এক মাস
পরেই।
আবার বই নিয়ে বসতে
হবে ভাবলেই গায়ে
জ্বর আসছে।
ইদানিং ভাবলে
অবাক লাগে, আম্মুর
কাছে যাওয়া অনেক
কমে গিয়েছে। শুরুর
দিকে সপ্তাহে দুবার,
কমতে কমতে এখন
মাসে দুবারও যাওয়া
হয় না। কথাবার্তা
ফোনেই সেরে নেই।
প্রতিদিনই আম্মুর কল
আসে তবে আমাদের
সংসার নিয়ে কিছুই
জানতে চান না।
বলেছেন, এদিকের
কথা ওদিকে আর
ওদিকের কথা এদিকে
যাতে না করি।
আমার মাঝে মাঝে
বলার জন্য পেট ফুলে
যায় কিন্তু কিছু একটা
বলতে চাইলেই আম্মু
থামিয়ে দেন। বলেন,
বড় হয়েছে এবার তুমি
ম্যানেজ কর। বিয়ের
আগে অনেক
শিখিয়েছি।
আমাকে বাধ্য হয়ে
অনেক কিছু আন্টির
কাছে জানতে
চাইতে হয়।
মাঝে অবশ্য দুই
তিনবার উনার সাথে
তর্ক বেঁধে
গিয়েছিল।
রাগ করে আম্মুর
কাছে চলে
গিয়েছিলাম। আম্মু
ঘন্টাখানেক পাশে
বসিয়ে আদর করে
দিয়ে আবার ফেরত
পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কদিন থাকতে
চাইলেও পাত্তা
দেননি। শাহেদ ফ্রি
থাকলে এসে নিয়ে
গিয়েছে আর ব্যস্ত
থাকলে আব্বু এসে
নামিয়ে দিয়ে
গেছে। এত
তাড়াতাড়ি ফিরে
আসায় লজ্জা লাগছিল
কিন্তু আন্টির আচরণে
ভুলে যেতেও সময়
লাগেনি।
দুপুরে আমরা কেউ
ঘুমাই না। আন্টি
একটা টার্কিশ
সিরিয়াল দেখেন।
দেখতে দেখতে
আমিও সেই
সিরিয়ালের ভক্ত
হয়ে গেলাম।
বেডরুমে টিভি
থাকলেও আন্টির
সাথে ড্রইংরুমে
বসেই দেখি। অনেক
বিষয়ে তখন আন্টির
সাথে আলাপ হয়।
পরিবার, সমাজ,
সম্পর্ক নিয়ে উনার
অভিজ্ঞতা আর
ব্যাখ্যা আমাকে মুগ্ধ
করে।
………… দেনমোহর – Love
Story Bangla ………….
কদিনের জন্য
আমাদের বাসায়
গিয়েছিলাম, আব্বুর
প্রেশারটা
বেড়েছে। শাহেদ
এসে নামিয়ে দিয়ে
চলে গেছে,
থাকেনি। সেদিন
রাতে ফোনে বলল,
আন্টির বেশ জ্বর।
সমস্যা নেই,
প্যারাসিটামল
দিয়েছে ঠিক হয়ে
যাবে। পরদিন রাত
এগারোটার দিকে
জানাল, আন্টির
ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
ক্লিনিকে ভর্তি
করেছে, শরীর বেশ
দুর্বল। প্লাটিলেট এক
লাখের নিচে চলে
এসে এসেছে, আরো
নামলে হয়ত লাইফ
সাপোর্ট আছে এমন
হসপিটালে
ট্রান্সফার করাতে
হবে।
আমার বুকটা মুচড়ে
উঠল। আব্বু পাশেই
ছিলেন। কথাবার্তা
উনার কানেও
গিয়েছে কিছুটা।
আমার মুখভঙ্গি
দেখেই আব্বু উঠে
গায়ে শার্ট
চড়ালেন।
– চল মামনি,
তোমাকে
হসপিটালে নামিয়ে
দিয়ে আসি।
আমাকে ব্যাগসহ
নামিয়ে আব্বু আর
দাঁড়ালেন না।
বললেন, তোমার
আম্মুকে নিয়ে
সকালে আসব। শরীর
বেশী ভাল নেই।
কেবিনে ঢুকে ব্যাগ
রেখে শাহেদের
পাশে বসলাম। এর
আগে এতরাতে কখনো
হাসপাতালে
আসিনি। কারো জন্য
রাত জাগিনি। আব্বু
আম্মু হাসপাতালে
ভর্তি থাকলে খালা,
আপু আর অন্যরা
সামলেছে। আমি
দিনে ডিউটি করে
বাসায় চলে যেতাম।
শাহেদের হাত ধরে
মিনতি করে বললাম,
– তোমার অফিস আছে
সকালে। রাতে আমি
থাকব আন্টির পাশে।
তুমি এখন যাও।
সকালে অফিসে
যাবার সময় নাস্তা
আর আমার কিছু কাপড়
নামিয়ে দিও। মিলি
প্যাক করে দিবে,
ওকে বুঝিয়ে বলব কল
করে।
আন্টি ঘুমাচ্ছেন।
সাদা চাদরে
শরীরটা গলা পর্যন্ত
আবৃত। উনার ডান হাত
ধরে পাশে চেয়ার
টেনে বসলাম। অন্য
হাতে স্যালাইন
চলছে।
বিয়ের দিন হতে সব
স্মৃতি মনে পড়ছে।
কিভাবে মায়ের মত
আগলে রেখেছেন শুরু
হতেই। নতুন সংসার
কিছুই জানতাম না,
কিছুই বুঝতাম না।
উনার বুদ্ধি পরামর্শ
মত চলে আমি এখন
শাহেদের প্রিয়
ওয়াইফ, মিলির প্রিয়
ভাবী আর শ্বশুরের
প্রিয় বৌমা।
মনে হতে লাগল এই
ভদ্রমহিলা ছাড়া এই
সংসারে আমি
চোখে পুরোই অন্ধকার
দেখব। উনাকে আমার
আরো বহুবছর পাশে
দরকার, আমার
অভিভাবক হয়ে, মা
হয়ে ছায়া দেয়ার
জন্য।
কখন আমার কপোল
বেয়ে অশ্রুর ধারা
নেমেছে টের
পাইনি।
ফোঁটায় ফোঁটায়
সেগুলো আন্টির
হাতের উপর পড়ছিল।
আমি কখনো
ভাবিনি, এত অল্প
পরিচয়ে মাত্র কয়েক
মাসে, রক্তের সম্পর্ক
নেই এমন কোন মহিলা
আমার অস্তিত্ব,
পরিচয় আর আবেগকে
এমনভাবে ছাপিয়ে
যাবেন।
উনি কখন চোখ
খুলেছেন তাও
দেখিনি। মৃদু হাসলেন
আমাকে দেখে,
– কি রে মা, কাঁদছ
কেন…
– আম্মা, আপনি
আমাদের ফেলে এত
তাড়াতাড়ি যেতে
পারবেন না। আমি
আপনাকে কোথাও
যেতে দিব না।
– আমি কোথাও যাব
না রে পাগলী
মেয়ে।
আরো অনেক বছর এই
মেয়েটার সেবা
নেয়া বাকি। আমার
দুর্বলতা জিজ্ঞেস
করেছিলে না?
তোমরাই আমার
দুর্বলতা। তুমি কি
খেয়াল করেছ তুমি
আজ প্রথম আমাকে
“আম্মা” ডেকেছ।
এইদিনটার জন্য আমার
অনেক অপেক্ষা ছিল।
ডেঙ্গুটা দেখি শাপে
বর হল।
অশ্রুসিক্ত চোখে
হেসে ফেললাম,
– নিয়েন সেবা দেখি
কত বছর পারেন।
চারদিন পর আম্মা
কিছুটা সুস্থ হয়ে
উঠলেন, ব্যাগ গুছিয়ে
একসাথে আম্মাকে
নিয়েই বাসায়
ফিরলাম।
3 months ago (January 12, 2021)
|
97 Views
|
এসব পোষ্ট না করার জন্য অনুরোধ করছি।
কাজের পোস্ট করুন